বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (নতুন সংস্করণ)

নরবাচক ও নারীবাচক শব্দ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (নতুন সংস্করণ) - NCTB BOOK

বাংলা ভাষায় বহু বিশেষ্য শব্দ ও কিছু বিশেষণ শব্দ রয়েছে যা নরবাচক অথবা নারীবাচক বলে ধরা হয়। আবার এমন কিছু বিশেষ্য-বিশেষণ শব্দ রয়েছে যা দিয়ে নর বা নারী উভয়কে বোঝায়। বিশেষ্য ও বিশেষণের এই নর-নারীভেদের নাম লিঙ্গ। ব্যাকরণে শব্দের নর ও নারীবাচকতাকে সংক্ষেপে 'পুং' ও 'স্ত্রী' দিয়ে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। নরবাচক শব্দ পুংলিঙ্গ, যথা: পিতা, পুত্র ইত্যাদি। নারীবাচক শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ, যথা: মাতা, কন্যা ইত্যাদি। নরবাচক ও নারীবাচক উভয়কে বোঝায় এমন সজীব বিশেষ্য শব্দকে উভলিঙ্গ বলে, যথা: সন্তান, মন্ত্রী ইত্যাদি। আবার নরবাচক বা নারীবাচক কোনোটাকেই বোঝায় না এমন অজীব বিশেষ্য শব্দকে ক্লীবলিঙ্গ বলে, যথা: ঘর, গাড়ি, টেবিল ইত্যাদি।

সাধারণ নারীবাচক শব্দ দুই ধরনের: পত্নীবাচক এবং অপত্নীবাচক। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক বোঝালে পত্নীবাচক হয়। যেমন- পিতা-মাতা, চাচা-চাচি, দাদা-দাদি, জেলে-জেলেনি, গুরু-গুরুপত্নী ইত্যাদি। অন্যদিকে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক না বোঝালে অপত্নীবাচক হয়। যেমন খোকা-খুকি, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, নেতা-নেত্রী, পাগল-পাগলি।

কিছু শব্দ রয়েছে যা নিত্য নরবাচক ও নিত্য নারীবাচক। নিত্য নরবাচকের উদাহরণ: কৃতদার, অকৃতদার। নিত্য নারীবাচকের উদাহরণ: সতীন, বিধবা।

নরবাচক শব্দ থেকে নারীবাচক শব্দগঠন

প্রত্যয় যোগে

নরবাচক শব্দকে নারীবাচক শব্দে পরিবর্তন করতে সাধারণত কিছু প্রত্যয় যোগ করতে হয়। এ রকম কয়েকটি প্রত্যয়ের প্রয়োগ দেখানো হলো:

-আ প্রত্যয়: বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রিয়-প্রিয়া, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা। 

-ই প্রত্যয়: দাদা-দাদি, জেঠা-জেঠি, পাগল-পাগলি। 

-ইনি প্রত্যয়: কাঙাল-কাঙালিনি, বাঘ-বাঘিনি। 

-ইনী প্রত্যয়: বিজয়ী-বিজয়িনী, যোগী-যোগিনী, তেজস্বী-তেজস্বিনী। 

-ঈ প্রত্যয়: কিশোর-কিশোরী, নর-নারী, সুন্দর-সুন্দরী। 

-নি প্রত্যয়: জেলে-জেলেনি, বেদে-বেদেনি, ধোপা-ধোপানি। 

-বতী প্রত্যয়: গুণবান-গুণবতী, পুণ্যবান-পুণ্যবতী। 

-মতী প্রত্যয়: বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, শ্রীমান-শ্রীমতী।

এছাড়া '-অক' প্রত্যয় দিয়ে গঠিত নরবাচক শব্দকে নারীবাচক করার সময়ে 'অক'-এর জায়গায় '-ইকা' হয়। যেমন- পাঠক-পাঠিকা, লেখক-লেখিকা, গায়ক-গায়িকা।

নারী-নির্দেশক শব্দ যোগে

কিছু ক্ষেত্রে নারী-নির্দেশক শব্দ যোগ করে নারীবাচক শব্দ তৈরি করা হয়।

যেমন- লোক-স্ত্রীলোক, শ্রমিক-নারী শ্রমিক, ছেলে-ছেলে বউ।

কিছু ক্ষেত্রে নর-নির্দেশক শব্দের বদলে নারী-নির্দেশক শব্দ যোগ করে নারীবাচক শব্দ তৈরি করা হয়।

যেমন- মদ্দা বিড়াল মাদি বিড়াল, ভাইপো - ভাইঝি।

স্বতন্ত্র শব্দে

কিছু নারীবাচক শব্দের সঙ্গে নরবাচক শব্দের গঠনগত মিল থাকে না।

যেমন- ভাই-বোন, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, বর-কনে, বাদশা-বেগম।

বাংলা ভাষায় প্রাতিষ্ঠানিক পদমর্যাদাকে নারীবাচক করা হয় না। যেমন। -

নার্গিস আখতার একজন সহকারী শিক্ষক

নমিতা রায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি

Content added By

সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন (✓) দাও। 

১. বিশেষ্য ও বিশেষণের নারী ও নরভেদের নাম কী? ক. বচন খ. নির্দেশক গ. বলক ঘ. লিঙ্গ 

২. নিচের কোন শব্দটি উভলিঙ্গ প্রকাশক? ক. সন্তান খ. ভেড়ি গ. ছাত্র ঘ. ঘর 

৩. 'ক্লীব লিঙ্গ' শব্দ কোনটি? ক. গাড়ি খ. মন্ত্রী গ. মানুষ ঘ. পাখি 

৪. কোন শব্দটি অপত্নীবাচক? ক. মাতা খ. দাদি গ. চাচি ঘ. শিক্ষিকা 

৫. নিচের কোনটি নিত্য নরবাচক শব্দ? ক. কৃতদার খ. ছেলে গ. নেতা ঘ. বাবা

৬. নিচের কোনটি নিত্য নারীবাচক শব্দ? ক. শিক্ষিকা খ. জেলেনি গ. মেয়ে ঘ. সতীন 

৭. '-অক' প্রত্যয় দিয়ে গঠিত নরবাচক শব্দকে নারীবাচক করার সময়ে '-অক' এর জায়গায় কী হয়? ক. -একা খ.-ওকা গ. -ইকা ঘ.-আকা 

৮. নিচের কোন নারীবাচক শব্দের সঙ্গে নরবাচক শব্দের গঠনগত মিল নেই? ক. বেগম খ. ভাইঝি গ. ছেলে বউ ঘ. গায়িকা

Content added By
Promotion